Wolf Children Ame and Wiki

12:33:00 AM


The Girl Who Leapt Through Time দেখার পর থেকেই মামুরো হোসোডা আমার পছন্দের একজন ডিরেক্টর হয়ে গেছেন। সেটা আমার অত্যন্ত ভালো লেগেছিল। হোসোডা এর পরের মুভি সামার ওয়ারস দেখার সময় তাই এক্সপেক্টেশন অনেক বেশি ছিল। আশা করেছিলাম অনেক আবেগ মথিত কোন মুভি হবে। কিন্তু পরে গিয়ে দেখলাম সেটা একটা ভালো ফ্যামিলি ড্রামা। কিছুটা আশাহত হলেও এবং খেলার কিছু না বুঝলেও সিনেমার শেষদিকে আমিও বলে উঠেছিলাম KOI KOI। :D

এসব কারনেই হসোডা এর সাম্প্রতিক ছবি
"Wolf Children Ame and Yuki" দেখার সময় এক্সপেক্টেশন ছিল ভিন্ন। আবেগ সমৃদ্ধ কিছু দেখবো এরকম আশা করি নি। আবার একদম সাধারন কিছু দেখবো তাও আশা করি নি। সবকিছু মিলিয়ে কেমন লেগেছে? দেখা যাক।

গল্পের প্রধান চরিত্র তিনটি। হানা, যে কিনা বাচ্চা দুইটার মা। আর আমে এবং তার বড় বোন ইউকি। তাদের নেকড়ে মানব বাবা মারা যাওয়ার পর মে এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে বসবাস করতে থাকে তার বাচ্চাগুলোকে লোকচক্ষুর আড়াল করার জন্য। বাচ্চাদুটো তাদের বাবার মতই নেকড়ে মানব। গল্পের দুটো দিক আছে। প্রথম দিকে হানার সাথে তাদের বাবার দেখা হওয়া, বিয়েশাদি ও বাচ্চা হওয়ার বিষয়টা। এই অংশটুকু। এরপর গ্রামে গিয়ে হানার স্ট্রাগল।

প্রথম অংশ শহরে। তাই মানুষজনের সঙ্খ্যা অনেক বেশি। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ব্যাকগ্রাউন্ডের উপর যখন মানুষগুল বসানো হয়েছে তা খুব একটা যত্ন করে করা হয় নি। মানুষগুলোকে মনে হচ্ছিল বাতাসে ভাসছে। কিন্তু অন্যদিকে প্রধার চরিত্রগুলো বেশ যত্ন নিয়ে করা হয়েছে, এবং তাদের প্রতিটা ডিটেইল খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে যখন হানা গ্রামে চলে যায়, তখন মানুষের সঙ্খ্যা বেশ কম, আর তাই এনিমেশন গুলোতে খালি চোখে দেখার মত কোন ট্রুটি নেই।

ক্যারেক্টারগুলোর মধ্যে হানা একজন সাধারন কলেজ স্টুডেন্ট হিসেবে শুরে করে। কিন্তু পরে তাকে বোঝা বইতে হয় সিঙ্গেল মাদারের। এভাবে চিন্তা করলে মনে হতে পারে বেশ ক্যার‍্যাক্টার ডেভেলপমেন্ঠ হয়েছে। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে হানার কলেজ লাইফ কোন ফোকাসের বিষ্য নয়। সে অংশুটুকু শুধু ওকামি এর সাথে তার দেখা হওয়ার জন্য বানানো হয়েছে। সেটা অন্যভাবেও করা যেত। হানার ট্রানজিশন কিভাবে হয়েছে সেটা সম্পর্কেও কোন আলোকপাত নেই। আসলে গল্পটা বর্ননা করেছে হানার মেয়ে ইউকি। তাই এটা সম্পর্কে ডিটেইল না থাকলেও মেনে নেওয়া যায়। অন্যদিকে ইউকি এর সম্পর্কে বেশ ডিটেইল এসেছে গল্পটাতে (সেই তো বর্ননা করছে!)। ছোটবেলায় তার দুরন্তপনা দেখলে যে কারো মুখে এক চিলতে হাসি থাকবে। গল্পের কমেডি এর সবচেয়ে বড় সোর্স ইউকি। অন্যদিকে একজন দুরন্ত মেয়ে থেকে স্কুলের অন্যান্য মেয়েদের সাথে মেশার জন্য নিজের নেকড়েসত্ত্বাকে লুকিয়ে রাখতে শুরু করে সেটাও বেশ সুন্দরভাবে দেখা গেছে।

তিনজন প্রধান চরিত্রের মধ্যে আমে এর স্ক্রিনটাইম সবচেয়ে কম। অথচ লক্ষ্য করলে মনে হবে আমে এর স্টোরিগুলোই সবচেয়ে ঘটনাবহুল। ছোটবেলায় যে জঙ্গলের প্রানীমাত্রই ভয় পেত সেই শেষ পর্যন্ত জঙ্গলে গমন করে (Ending Spoiled)। মাঝখানে এক বৃদ্ধ নেকড়ে থেকে সে শিক্ষা গ্রহন করে। তার চরিত্রের এই চেঞ্জটা আমরা দেখতে পাই না, কিন্তু অনেক আগে থেকেই অনুমান করতে পারি। তবুও বলতে হয় এই পরিবর্তনটা অনেকটা আন এক্সপেক্টেড। শেষ এ গিয়ে এক পার্কিংলট থেকে মাকে ফেলে আমে এর চলে যাওয়াটা অনেকটা হতাশাজনকই লাগে। আমরা বাঙ্গালী জাতি মাকে অনেক পছন্দ করি। তাই কান্নারত কোন কথাবার্তা ছাড়া অবস্থায় মাকে ফেলে যাওয়ার জায়গাটা দেখতে কিছুটা  বিরক্তিকর লাগে বটে।

ইউকি আর আমে ভিন্ন ভিন্নভাবে তাদের রেজুল্যুশনে পৌঁছায়। মাঝখানে তাদের কোন সত্ত্বা বেশি দরকারি এটা নিয়ে একটা ছটখাট ঝগড়া হয়। যা থাকা আর না থাকাটা শেষ পরিণতিতে কোন প্রভাব ফেলে না। অন্যদিকে ক্লাইমেক্সে আমে আর হানা একজায়গায় থাকলেও, ইউকি আটকা পড়ে থাকে স্কুলে। পুরো ফ্যামিলিকে একসাথে রাখতে পারলে আমার হয়ত আরো ভালো লাগত। ইউকি এর রেজুল্যুশন হয় স্কুলে আতকা পড়ে থেকে একটা কনফেশনের মাধ্যমে। আমে এরটা তো আগেই বলেছি। এখন কি মনে হয় কেউ বাদ পড়েছে?

হ্যাঁ। হানা। সে গ্রামে চলে গিয়েছিল তার সন্তানদের স্বাধীনভাবে বড় হতে দেয়ার জন্য। কিন্তু আমরা দেখতে পাই মনের ভিতরে তার ইচ্ছা তার সন্তানরা মানবসত্ত্বাকে আপন করেই বড় হোক। তাই আমে যখন জঙ্গলে ছুটে গিয়েছি তখন সে আমেকে ফেরাতে ছুটে গিয়েছিল। সে জানত একদিন আমে আর ইউকি তাদের নিজেদের পথ বেছে নিবে। কিন্তু এরপরেও তার পরিণতি বলতে তেমন কিছু নেই। বরং সন্তান্দের বড় করে ছেড়ে দেয়াই তার কাজ। আমরা তার অনেক স্যাক্রিফাইস দেখতে পাই। কিন্তু তার কোন গেইন নেই। সে অনেক সিমিলার মাদের একজন যে মা যে তার ক্যারিয়ার তার সন্তানদের জন্য বিসর্জন দেয় - Alone but content।

এই মুভি সম্পর্কে কথা হবে আর মিয়াজাকি এর কথা আসবে না তা তো হতেই পারে না। প্রথমে আমি যখন এই (বা এই জাতীয়) তুলনাটা পড়ছিলাম, তখন আমার আর্জেন্টাইন্দের যেকোন প্রমিসিং প্লেয়ারকে ম্যাড়াডোনা বা ব্রাজিলিয়ানদের ক্ষেত্রে পেলে এর সাথে তুলনা করার কথা মনে পড়ে যায়। প্রত্যেকে যার যার মত স্বাধীন এবন ইউনিক। এর আগে এই তুলনা নিয়ে বেশ বাজে একটা অভিযোগ আছে আমার। মাকোতো শিনকাই এর "Children Who Chases Lost Voices"। সেটা যখন বের হয়েছিল তখন অনেকেই শিনকাইকে মিয়াজাকি এর উত্তরসূরী বলে ঘোষনা করে দিয়েছিল। কিন্তু সিনেমাটা দেখার পর আমি বেশ হতাশ হই। হ্যা, সেটা মিয়াজাকির মতই, এতিটাই মিয়াজাকির মত যে তাকে উত্তরসূরি না বলে বলা উচিত ছিল, "মিয়াজাকির মুভির (ক্যাসল ইন দা স্কাই, নাউসিকা) এর বেশ নিম্নমানের কপি"। আর তাই উলফ চিল্ডরেন দেখার আগে সেই ভয়টাই আমার কাজ করছিল। কিন্তু দেখার পর বলতে হবে এবারের তুলনাটা বেশ যুক্তিসঙ্গত। ইউকি এর দোউরাদোউড়ির সময় মিজাকাইর প্রবল একটা ছাপ পাবেন, কিন্তু আল্টিমেন্টলি হোসোডা এর স্বকীয়তা কোনভাবেই নষ্ট হয়নি। সেজন্য মামুরো হোসোডাকে একটা স্ট্যান্ডিং ওভেশন দেয়া যায়। মিয়াজাকি বা স্টুডিও জিবলীর মুভির হার্ট এত সুন্দরভাবে তুলে আনতে এর আগে স্টুডিওর বাইরের কাউকে করতে দেখিনি।

মিউজিক হোসোডা এর আগের মুভির মতই পিয়ানো ঘরনার। এগুলো মনে রাখার মত কিছুনা। কিন্তু ক্রেডিট রোলের সময় এন্ডিং সংটা বেশ ক্যাচি।

সবশেষে "উলফ চিল্ডরেন আমে এন্ড ইউকি" বেশ ভাল একটা ফ্যামিলি মুভি। সামার ওয়ার্স এর মত এক্সাইটিং ড্রামা নয়। কিছুটা স্লাইস অব লাইফ ঘরনার। আবার এতে রয়েছে অনেক আবেগ। বেশ ভালো একটা প্যাক।

You Might Also Like

0 comments

Popular Posts

Like us on Facebook

Flickr Images