সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ

10:46:00 PM


সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ
সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ by Shuhan Rizwan

My rating: 4 of 5 stars



[If you have read enough history there is no spoiler. Otherwise you might get some.]


আমার ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়ার ব্যাপ্তি বেশ কম। আর ১৯৭১ নিয়ে পড়াশোনার ব্যাপ্তি তাই আরো কম। এরমাঝেও যে ঐতিহাসিক উপন্যাসটি আমার বেশ ভাল লাগত সেটি হল, হুমায়ুন আহমেদ এর জোছনা ও জননীর গল্প। অনেক বছর পর সেই একই রকম আরেকটা উপন্যাসের স্বাদ পেলাম সুহান রিজওয়ান এর সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ-এ।

প্রথমত, বইটির 'পূর্বখন্ড'-তে থাকা অনুযোগগুলোর কথা বলে নেই। বইটির পূর্বখন্ডের বেশকিছু ঘটোনা আগে আমি পড়েছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়েছে হুবুহু এই লাইনগুলোই পড়েছি। লেখক নিজেও উল্লেখ করেছেন কিছু কিছু জিনিস তিনি অন্য বই থেকে হুবুহু তুলে দিয়েছেন। অন্য উপন্যাসের লেখকেরাও সেম কাজ করেছেন বলেই আমার ধারনা। আমি নিজে ননফিকশান কোন ইতিহাস বই তেমন পড়ি নি। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকটা বই এর মধ্যে এরকম রিপিটেশন দেখলে কিছুটা আশাহত হতে হয়। তথাপি, যারা প্রথমবার এরকম একটা বই হাতে নিছেন তাদের জন্য এই বইটা অবশ্যই একটা অনন্যসাধারন অভিজ্ঞতা হবে, অনেকটা 'জোছনা ও জননীর গল্প' পড়ার সময় আমার যেরকম হয়েছিল।

তার উপর তাজউদ্দীন এর গল্প বলা হলেও পূর্বখন্ডে তাজউদ্দীন এসেছেন বেশ কম।বরং পূর্বখন্ডে অন্যান ঘটনাই আলোচনায় এসেছে বেশি। এর কারনটা হয়ত বোধগম্য। তখনকার সরকারে এক্সাক্টলি কি হয়েছে তা হয়ত ঠিকমত নথিবদ্ধ নেই; আর তাই লেখক যুদ্ধক্ষেত্রের ঘটনা বর্ননা করেছেন। বই এর বিভিন্ন বর্ননা প্রসঙ্গে আমার মনে হচ্ছে, লেখকের অনেক ঘটনার সোর্সই তাজউদ্দীন এর মেয়ে রিমির সম্পাদিত বিভিন্ন বই বা সাক্ষাতকার। এবং এটা স্পষ্ট যে তিনি যুদ্ধাবস্থায় নিজের বাবার দেখা তেমন একটা পাননি। তাই সেখানে তাজউদ্দীন এর কথা আনাটা কষ্টকর ছিল। তাজউদ্দীন এর দিল্লী ভ্রমণ বেশ সংখিপ্ত, কিন্তু ক্র্যাক প্লাটুন বিভিন্ন মিশন এর বর্ননা, কলকাতার হোটেলে ঘটনাবলী বেশ দীর্ঘ। অবশ্য, অন্যতম প্রধান চরিত্র তারেকুল আলম, আলাউদ্দিন আর আব্দুল বাতেন এর ইন্ট্রোডাকশন আর ডেভেলপমেন্ট এর জন্য এই ঘটনাগুলোর দরকার ছিল; অন্যদিকে খালেদ মোশাররফ পরবর্তীতে এক গুরত্বপূর্ন ঘটনার জন্ম দিবেন, তাই তারও একটা পরিচিতি আগে থেকেই পাঠক পেয়ে যাবেন। তথাপি, দিল্লী ভ্রমনে (figure of speech btw) লেখক আরো কল্পনার আশ্রয় নিতে পারতেন।

বই এর দ্বিতীয় অংশ 'উত্তরখন্ড', এই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। তাজউদ্দিন পেয়েছেন অনেক স্ক্রিনটাইম(পাতা)। গল্পের (প্রায়) সমাপ্তি টানা হয়েছে, চার নেতার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। যেহেতু চারজনের ভাগ্য একই সুতোয় বাঁধা ছিল, লেখক পারতেন বাকি তিনজনকেও এক্সপ্লোর করতে। কিন্তু লেখক সযত্নে সেটা এড়িয়ে গেছেন।

কিন্তু উত্তরখন্ডে এসে, প্রায় প্রতি চ্যাপ্টারের শেষেই ছিল 'আসন্ন দূর্যোগের ঘনঘটা' জাতীয় ভবিষ্যদ্বানী। হুমায়ুন আহমেদও এই কাজটা করে থাকেন। অন্যদিকে আনিসুল হক 'যারা ভোর এনেছিল' আর 'উষার দুয়ারে'-তে ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীকে দিয়ে এরকম ভবিষ্যদ্বানী দিয়েছেনন। এরকম বাহুল্য না থাকলে হয়ত আরো ভালো হত, যদিও সেগুলো একেকবার একেক চরিত্রের মাধ্যমে এসেছে।

এখন শেষ কথা, বইটা একবার পরা শুরু করলে থামিয়ে রাখা বেশ কষ্টকর। বিশেষত 'উত্তরখন্ড' টানটান উত্তেজনায় ভরপুর। আর শেষ এর দিক এসে আপনার মন খারাপ না হয়ে যাবে না। আপনি বাংলার একেকজন সূর্যসন্তানদের জন্য অনেকটা আক্ষেপই করবেন। তিন যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশকে কিভাবে তছনছ করে দিল ভেবে একটা আক্ষেপ আসবেই।

এই ঘটনা নিয়ে হুমায়ুন আহমেদ রচনা করেছিলেন 'দেয়াল'। সেটাতে হুমায়ুন আহমেদ এর আবেগের মাত্রা আরো বেশি ছিল, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা মনে হচ্ছিল জোর করে লেখা হয়েছে বা লেখক পাঠককে উপদেশ দিচ্ছেন। 'সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ' বই এ বঙ্গবন্ধু, চার নেতা বা খালেদ মোশাররফের মৃত্যুর পর আবেগের মাত্রা অনেক সংযত। বরং তা প্রকাশ করা হয়েছে কোন একটা চরিত্রের মাধ্যমে বা সামান্য একটি লাইন দিয়ে। যদিও লেখকের বায়াস পরিষ্কার, কিন্তু পাঠক কি সিদ্ধান্ত নিবে বা কি অনুভব করবে তার দায়িত্ব পাঠকের। সেদিক থেকে চমৎকার পরিসমাপ্তি।

লেখকের আরো অনেক উপন্যাস পড়ার অপেক্ষায়, আজকে এখানেই শেষ করছি। :)



View all my reviews

You Might Also Like

0 comments

Popular Posts

Like us on Facebook

Flickr Images